রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর : ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’র চেয়ারম্যান উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামকে পুরস্কৃত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বাড্ডা থানায় কর্মরত রয়েছেন।
ডিএমপি’র সদরদপ্তরে তার এ কাজকে আরো অনুপ্রাণিত করতে পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া মঙ্গলবার (১১ জুন) পুরস্কার প্রদান করেন।
এসআই শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশকে ধুমপানমুক্ত করে গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি গড়ে তুলেন একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। যার নাম ‘ধুমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’। সংগঠনের কাজকে দ্রুত প্রসারিত করতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও কার্যক্রম শুরু করেন।
তার এই সংগঠনের কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশের মাটিতে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর ২৪টি দেশে। পুলিশ কর্মকর্তার এমন মহতী উদ্যোগ্যের কারণে তার এই কাজকে আরো অনুপ্রাণিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম জানান, ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন এখন শুধু দেশের গণ্ডিতেই নয়. দেশ পেরিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ ২৪টি দেশে সংগঠনের প্রবাসী বাঙালিরা এই সচেতনতামূলক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি এমন মহতী কাজের অণুপ্রেরণা প্রসঙ্গে জানান, ‘কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ধূমপান শুরু করেছিলেন তিনি। এক সময় গলাব্যথা, কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তখন ধূমপান ছেড়ে দেন। ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো অনুধাবন করতে পেরে এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করেন তিনি।
এরপর কর্মজীবনে ঢোকার পর ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আরো অভিজ্ঞতা অর্জন হয় তার। ২০০৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেন ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন।
চাকরির বাইরে অবসর সময়টুকু ধূমপায়ী রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফুটপাতের দোকানদারসহ নিম্ন আয়ের মানুষকে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো বোঝাতে থাকেন। এমনকি ডিউটি অবস্থায়ও সুযোগ পেলে ধূমপায়ীদের ধূমপান না করার ব্যাপারে সচেতন করতে চেষ্টা চালান।
ধীরে ধীরে তাঁর সচেতনতামূলক এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৬৪ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় তাঁর সংগঠনের সদস্য রয়েছেন। যাঁরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও শিক্ষার্থীদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
এসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার একার পক্ষে একটি দেশকে নিজের মতো করে সাজানো সম্ভব নয়। তবে তিনি যে কাজটি শুরু করেছেন সেটা যদি সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সকলে যদি তাকে সহযোগিতা করেন তাহলে ঠিকই বাংলাদেশ একদিন ধূমপানমুক্ত হবে।’
শফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাদৈর গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। ১৯৯৬ সালের মার্চে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপিতে) কনস্টেবল পদে যোগদান করেন শফিক। চাকরির পাশাপাশি তিনি রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার উত্তরার পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টারে।